আন্তর্জাতিক বাজারে বুকিং রেট কমে যাওয়ার প্রভাবে খাতুনগঞ্জের বাজারে লাগাতার কমছে ভোজ্যতেলের দাম। নতুন অর্থবছর শুরুর পর থেকেই ভোজ্যতেলের দাম পড়তে শুরু করেছে। দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম এ পাইকারি বাজারে গত ১৫ দিনে প্রতি লিটারে কমেছে ১০-৩০ টাকা পর্যন্ত। হু হু করে দাম কমে যাওয়ায় বেকায়দায় পড়েছেন খাতুনগঞ্জের ভোজ্যতেল ব্যবসায়ীরা। তবে দাম কমলেও খুচরা বাজারে নেই এর প্রভাব। এর আগে বেশ কয়েক দফা দাম বাড়িয়ে বোতলজাত সয়াবিন প্রতি লিটারে ৬ টাকা কমানোর ঘোষণা দেন ভোজ্যতেল ব্যবসায়ীরা। বর্তমানে বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম নির্ধারিত রয়েছে প্রতি লিটার ১৯৯ টাকা। একইভাবে পাম অয়েলের নির্ধারিত দাম ১৫৪ টাকা।
খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা বলছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে বুকিং রেট কমে গেছে। এর প্রভাব পড়েছে খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজারে। মিলাররাও বাধ্য হয়ে সরকারি রেটের কমে ভোজ্যতেল বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। এতে মোটা অংকের লোকসান গুনতে হচ্ছে তাদের।
সরকার ও ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর হিসাব মতে, দেশে বছরে ২০ লাখ টন ভোজ্যতেলের চাহিদা রয়েছে। কিন্তু সারাদেশে ভোজ্যতেল নিয়ে সংকটের কথা বলা হলেও চলতি (২০২১-২০২২) অর্থবছরে আমদানি হয়েছে চাহিদার এক-তৃতীয়াংশের বেশি ভোজ্যতেল। এনবিআরের তথ্য অনুযায়ী, ২০২১-২০২২ অর্থবছরে প্রায় ৩৩ লাখ টন ভোজ্যতেল আমদানি হয়েছে। এর মধ্যে পাম অয়েল আমদানি হয়েছে প্রায় ২১ লাখ টন। খাতুনগঞ্জে পাম অয়েল বেশি কেনাবেচা হয় বলে জানান ব্যবসায়ীরা।
এদিকে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বেড়ে যাওয়ার অজুহাতে গত রমজানের ঈদের পর ৫ মে এবং ৯ জুন দুই দফায় ভোজ্যতেলের দাম বাড়ায় ভোজ্যতেল ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন। ৯ জুন বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম প্রতি লিটারে ৭ টাকা বাড়িয়ে ২০৫ টাকা করা হয়। এর আগে ৫ মে নির্ধারিত দর অনুযায়ী ছিল ১৯৮ টাকা।
একইভাবে ৫ লিটারের বোতলের দামও ৯৮৫ থেকে বাড়িয়ে ৯৯৭ টাকা করা হয়। খোলা সয়াবিন তেল প্রতি লিটারে ৫ টাকা বাড়িয়ে করা হয় ১৮৫ টাকা। অন্যদিকে পাম অয়েলের দাম ১৭২ টাকা থেকে কমিয়ে ১৫৮ টাকা করা হয়। পরবর্তীসময়ে ২৭ জুন থেকে বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম প্রতি লিটারে ৬ টাকা কমে হয় ১৯৯ টাকা। ৫ লিটারের বোতলের দাম নির্ধারণ করা হয় ৯৮০ টাকা। এছাড়া প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেলের দাম ১৮০ টাকা, পাম অয়েল ১৫৮ টাকা লিটার।
খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ১৫ দিনের ব্যবধানে প্রতি মণে দেড় হাজার টাকা পর্যন্ত কমেছে ভোজ্যতেলের দাম। এর মধ্যে বেশি কমেছে এস আলম ব্র্যান্ডের তেলের দাম। বুধবার (১৩ জুলাই) খাতুনগঞ্জের বাজারে সিটি গ্রুপের প্রতি মণ সয়াবিন তেল বিক্রি হয়েছে ৬ হাজার ৫শ টাকায়। ১৫ দিন আগে এ তেলের দাম ছিল ৭ হাজার টাকা। একইভাবে এস আলম গ্রুপের সয়াবিন তেল বিক্রি হয়েছে ৬ হাজার ৪শ টাকায়। ১৫ দিন আগে এ তেলের দাম ছিল ৬ হাজার ৮শ টাকা। এস আলম গ্রুপের পাম অয়েল বিক্রি হয়েছে প্রতি মণ সাড়ে ৪ হাজার টাকায়, যা ১৫ দিন আগেও বিক্রি হয়েছিল ৬ হাজার টাকায়। অন্যদিকে সিটি গ্রুপের পাম অয়েল বিক্রি হয় প্রতি মণ ৫ হাজার টাকায়, যা ১৫ দিন আগেও ছিল ৬ হাজার ২শ টাকা।
চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ আড়তদার সাধারণ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মহিউদ্দিন বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্যতেলের বুকিং রেট কমে গেছে। এখন খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজারে বিক্রি করতে হচ্ছে সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে অনেক কম দামে। যাদের কাছে তেলের ডিও ছিল তারা লোকসান দিচ্ছে। প্রতিদিন কোটি কোটি টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে ভোজ্যতেল ব্যবসায়ীদের।
চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ মেসার্স আর এন এন্টারপ্রাইজের মালিক আলমগীর পারভেজ বলেন, এটা আন্তর্জাতিক বাজারে যেভাবে বাড়ছে তার চেয়ে দ্বিগুণ গতিতে কমে গেছে। এখন আমাদের ১ হাজার ৫০ জোড়া পামওয়েল, ১ হাজার ৪৫০ জোড়া সয়াবিন সঙ্গে সঙ্গে আমাদের স্থানীয় বাজারেও কমে গেছে। আন্তর্জাতিক বাজারের মতো দেশের বাজারেও কমেছে সব ধরনের ভোজ্যতেলের দাম। গত এক মাসে ভোজ্যতেলের দামের ক্ষেত্রে প্রতি কেজিতে কমেছে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা।
এ বিষয়ে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) চট্টগ্রাম বিভাগীয় সভাপতি এস এম নাজের হোসাইন বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্যতেলের দাম কমছে। পাইকারি বাজারেও দাম কমছে ভোজ্যতেলের। বিশেষ করে খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজারে সয়াবিন তেল ও পাম অয়েলের দাম কমেছে। কিন্তু খুচরা বাজারে কমছে না।
তিনি বলেন, প্যাকেটের গায়ে দাম বেশি লেখা থাকলে তো বাজারে দাম কমবে না। এজন্য সরকারের ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনই দায়ী। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়লে সরকারি সংস্থাগুলো তেলের দাম সমন্বয়ের জন্য উঠে পড়ে লাগে। এখন যখন কমেছে, তখন তারা খুচরা বাজারে দাম সমন্বয় বা কমানোর কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। এখন সরকারের উচিত দ্রুত খুচরা পর্যায়ে ভোজ্যতেলের দাম সমন্বয় করা।